হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ: বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের শাস্তি কি বাতিল হবে?
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিলাসী বিল: অনিয়ম খতিয়ে দেখতে দুই তদন্ত কমিটি
জনবার্তা, স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজধানীর মিরপুরের দোয়ারীপাড়ায় সরকারি একটি প্লট প্রকল্পের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
বুধবার গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইমরুল চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। আর জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (সদস্য-পরিকল্পনা) বিজয় কুমার মণ্ডলকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ১৬ মার্চ ‘উচ্ছেদ বিলাসী বিল’ শিরোনামে দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ এ উচ্চ পর্যায়ের দুটি কমিটি গঠন করে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, একটি উচ্ছেদ অভিযানে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে দুটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। একটি কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইমরুল চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অনিয়ম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি মতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের থেকে।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. দেলওয়ার হায়দার বলেন, মিরপুরের উচ্ছেদ অভিযানে অনিয়মের বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংস্থাটির সদস্য (পরিকল্পনা) বিজয় কুমার মণ্ডল মণ্ডলকে প্রধান করে উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. মুশফিকুল ইসলাম ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে (মিরপুর গৃহসংস্থান বিভাগ-২) আবু হোরায়রাকে সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
দেশ রূপান্তরের প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মিরপুরের দোয়ারীপাড়ায় উচ্ছেদের নামে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের ওই জমি থেকে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদে প্রথম পাঁচ ধাপেই প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল। ষষ্ঠ ও চূড়ান্ত ধাপে রহস্যজনকভাবে প্রস্তাবটি মাঠ পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়। সে চিঠিতে প্রস্তাবকারী নির্বাহী প্রকৌশলী যেন দ্রুত সংস্থাটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে ‘কথা বলেন’ সে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর ওই নির্বাহী প্রকৌশলীই আরেক চিঠিতে ওই খরচ প্রায় ১ কোটি টাকা দেখান।
যেখানে প্রকল্পের ৬ হাজার ২৫০ জন শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের একবেলা খাবার খরচ বাবদ বিল দেখানো ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকা। বলা হয়েছে, ৭০টি বুলডোজার ভাড়ায় লেগেছে ৫৪ লাখ ৫ হাজার ৪০০ টাকা, মাইকিং ও রিকশা ভাড়ায় লেগেছে ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। উচ্ছেদকাজে নিয়োজিত ২ হাজার ৭০০ শ্রমিকের মাথায় বাঁধার জন্য লাল ফিতা কিনতে লেগেছে ২০ হাজার টাকা। পুলিশ আনা-নেওয়ার কাজে ১২৫টি বাস লেগেছে, যার ভাড়া দিতে হয়েছে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। শ্রমিক আনা-নেওয়ার জন্য ১০০ ট্রাক ভাড়ায় লেগেছে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকা। দুর্ঘটনা আশঙ্কায় ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছিল, যে বাবদ খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৪০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ দেখানো হয় ৯৯ লাখ ১২ হাজার ৭৯০ টাকা।
উচ্ছেদ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের দাপ্তরিক কাগজপত্রে ৫ দিনের উচ্ছেদ অভিযানের নাম দিয়ে প্রায় কোটি টাকা খরচের ফিরিস্তি দিয়ে বেশির ভাগ অর্থ জাগৃক থেকে তুলেও নেওয়া হয়েছে।