হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ: বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের শাস্তি কি বাতিল হবে?
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গভীর সংকটে
জনবার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সীমিত ব্যাংক লেনদেনের আওতায় না পড়ায় সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দেশের ব্যাংকবহির্র্র্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০ শাখায় কর্মরত ৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যত এখন ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। আগেই জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ স্থগিত করায় ঋণ আদায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরও করোনার কারণে সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় শূন্যের কোটায় নেমে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এ খাতের শীর্ষ নির্বাহীরা। একে তো আয় শূন্যের কোটায়, এর ওপর সামনে ঈদ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে হবে; সব মিলে মহাবিপদে আছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার চিন্তা, অপর দিকে যারা এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখেছিলেন তাদের টাকা উত্তোলনের চাপ; সবমিলে তারা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। ঋণ আদায় বন্ধ থাকায় আমানতকারীদের অর্থ কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্নে আছেন তারা। এ কারণে অন্তত আমানতকারীদের সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার নগদ অর্থ সরবরাহ করার অনুরোধ করেছেন এ খাতের শীর্ষ নির্বাহীরা। এক বছরের জন্য এ অর্থ সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে এ খাতের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)।
জানা গেছে, দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকের মতো লেনদেন করতে পারে না। সাধারণ আমনতকারীদের কাছ থেকে ব্যাংকের মতো সঞ্চয়ী আমানতও নিতে পারে না। শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদি আমানত নিতে পারে। সাধারণত ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বেশির ভাগ আমানত রাখে।
পিপলস লিজিংসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা দিতে পারছে না। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণকেলেঙ্কারির দায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ও এনবিআরবি ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার পলাতক রয়েছেন। ইতোমধ্যে অবসায়ন করা হয়েছে পিপলস লিজিং। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা আমানত রাখতেন তারা অনেকটা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এ কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত প্রত্যাহার করার একটা চাপ ছিল আগে থেকেই।
এর ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে তৈরী পোশাকের রফতানি আদেশ বাতিল করে দিচ্ছেন বিদেশী ক্রেতারা। কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যেই জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ স্থগিত করে দিয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে গ্রাহক ঋণপরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি বলা যাবে না।
এ বিষয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি জানান, আগে থেকেই আমানত প্রত্যাহারের একটি চাপ ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। এর ওপর জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ স্থগিত করায় তাদের কাছ থেকে যারা ঋণ নিয়েছিলেন তারা কার্যত ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন। এটাই তাদের জন্য বড় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। একেতো তারা আমানত পাচ্ছেন না, এর ওপর টাকা আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের নগদ অর্থের প্রবাহ শূন্যের কোটায় নেমে গেছে।
এ দিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশেই সাধারণ ছুটি চলছে। বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংক চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণত, ব্যাংক কার্যক্রম এখন টাকা উত্তোলন ও জমা দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
কিন্তু সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম না থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব কার্যক্রম মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ রয়েছে। ওই এমডি জানান, ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২০০ শাখায় কর্মরত প্রায় ৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী অলস সময় কাটাচ্ছেন। এ দিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাবে। ফলে যারা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী আছেন তারা একনাগারে আমানত প্রত্যাহারের চাপ সৃষ্টি করবেন। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় যাদের আমরা ঋণ বিতরণ করেছি তাদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায় করা সম্ভব হবে না। এ কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা মহাবিপাকে আছেন। একেতো সামনে কর্মকর্তাদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হবে, এর ওপর সামনে ঈদের কারণে বেতনের সাথে বোনাস দিতে হবে। অপর দিকে আমানতকারীদের অর্থ উত্তোলনের চাপ থাকবে। সবমিলেই কর্মকর্তারা মহাদুশ্চিন্তায় আছেন।