ধান পাকছে, শ্রমিক সংকটের আশঙ্কায় নওগাঁর কৃষকরা

নওগাঁ প্রতিনিধি: কাঁচা সোনা রঙে দিগন্ত জোড়া মাঠ ছেয়ে গেছে। পাকা ধানের ডগায় এক ফোঁটা শিশির বিন্দু মনকে করে স্নিগ্ধ ও সতেজ। এ যেন ধানের স্বর্গরাজ্য। যেদিকেই দু’চোখ যায় শুধু ধান আর ধান। দখিনের বাতাস মাঠে ঢেউ খেলে জানান দেয় ধান কাটার আগমনী বার্তা। তাইতো নতুন ধানের গন্ধে কৃষকের মন মাতোয়ারা।

কালবৈশাখীর কাল থাবা এখনো পরেনি চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে। আবহওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছে নওগাঁর কৃষকরা। আবহাওয়া ভাল থাকলে আর কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হবে ধান কাটা-মাড়াই ও ঘরে তোলার কাজ।

মাঠে মাঠে পাকতে শুরু করেছে আগাম জাতের ধান। মাঠে শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে ধান কাটায় শ্রমিকের তীব্র সংকটের আশঙ্কা করছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। নিজ গোলায় ধান না উঠানো অবধি দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষকরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আবাদ ভাল হয়েছে। পোকা-মাকড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মোখিন হয়নি এখন পর্যন্ত। এজন্য আমরা আশা করছি গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফলন বেশি হবে।

এবছর তীব্র শ্রমিক সংকটে পড়তে হবে জানিয়ে তারা জানান, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইতিমধ্যেই অনেক জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছর অন্য জেলা থেকে ধান কাটতে আসতে পারবে না শ্রমিকরা। তাই শ্রমিক সংকটে সময়মত ধান ঘরে উঠানো যাবে কি-না এই আশঙ্কায় রয়েছেন এ এলাকার হাজার হাজার কৃষক।

সদরের হাজীপাড়া মহল্লার কৃষক বেলাল হোসেন উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ’আমরা মূলত অন্য জেলার শ্রমিকদের উপর নির্রশীল। কাজের শুরুর আগে শ্রমিকদের মোবাইলের মাধ্যমে আসতে বললেই কাজে যোগ দেয় তাঁরা। কিন্তু এ বছর তাঁদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন আশার বাণী শোনা যায়নি। ফলে বিপাকে পরেছেন মধ্য আয়ের ধান চাষীরা।

করোনায় বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন থাকায় কোন শ্রমিক এবার এই এলাকায় আসতে পারবেনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ বছর নিজের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। নিজে নিজে এসব ধান কাটাতো আর সম্ভব না। প্রতিবছর বাহিরের শ্রমিকরা আসেলেও স্থানীয় শ্রমিক নিতে হয় দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়ে। এরপরও যদি বাহিরের শ্রমিক না পাওয়া যায় তবে-ধান নিয়ে বিপাকে পরতে হবে বলে জানান এই কৃষক।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও ২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সঠিক সময়ে চারা লাগানো, নিবিড় পরিচর্যা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, যথা সময়ে সেচ ও কীটনাশক দেওয়া এবং সার সংকট না থাকায়  চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলায় প্রায় ৪ লক্ষ কৃষক পরিবার আছে উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রতি পরিবার থেকে গড়ে ২ জন লোক ধান কাটায় অংশ নিলে এ মৌসুমে অন্য এলাকার শ্রমিকের প্রয়োজন নেই।

শ্রমিক সংকটের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদ জানান, মরণব্যাধী করোনাভাইরাসের মধ্যে বাহির এলাকা থেকে শ্রমিক না এনে বরং এলাকার ভ্যান, রিকশা, অটোচালক যারা বেকার হয়ে দিন কাটাচ্ছে তাঁদের কাজে লাগানো যেতে পারে। এই সংকটময় সময়ে তাঁরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ কোন কাজই ছোট না।

বাহির এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবণা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুর্যোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কৃষকের ধান ঘরে তুলে দিতে হবে। কৃষক বাঁচলেই সবাই বাঁচবে।  তাই ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময় কৃষকদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।