পর্দাপ্রথা নারীর পোশাকের স্বাধীনতাকে করেছে খর্ব, থেমে নেই ধর্ষণ

প্লাকার্ড হাতে নারীরা পোশাক পরার স্বাধীনতা চেয়ে প্রতিবাদ করছেন

মতামত 

শাকিলা পাতা (এসপি)|

ইসলামে নারীর পর্দা করা ফরজ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নারীরা যেন তাদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে, ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে, চাদর দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের মাথার ওড়নাকে তাদের বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে। নেকাব করে, হাত-পায়ে মোজা পরিধান করে। এতে পুরুষের যৌন লালসা থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় মেয়েদের বোরখা পরার অর্থ হল, মেয়েরা লোভের জিনিস, ভোগের বস্তু, মেয়েদের শরীরের কোনও অংশ পুরুষের চোখে পড়লে পুরুষের যৌন-কামনা আগুনের মতো দাউ দাউ করে জ্বলে। পুরুষদের এই যৌন সমস্যার কারণে মেয়েদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে। এই হলো সপ্তম শতাব্দিতে জন্ম হওয়া ইসলামের বিধান। এই বিধান বলছে, পুরুষরা অসভ্য, বদ, যৌনকাতর, ধর্ষক, তারা নিজেদের যৌন ইচ্ছেকে দমন করতে জানে না। আর জানে না বলেই শরীরের আপাদমস্তক ঢেকে রাখার দায়িত্ব মেয়েদের নিতে হয়।

বলা হয় বোরকা পরলে নারীরা নিরাপদ। তাদের দিকে ভালো চোখে তাকায় সবাই। কিন্তু ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান বোরকা পরিধান করত, পর্দা মেনে চলত, তাহলে তাকে কেন মাদ্রাসার শিক্ষক ধর্ষণ করল? তার গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করল (২০১৯ সালের এপ্রিলের ঘটনা) ? এখানে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, পর্দা বা বোরকা পরেও শত শত নারী নুসরাতের মত ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় নারীকে নির্যাতনের পরও তার পোশাককে দোষ দেয়ার ঘটনা ঘটে।

ওয়াজ মাহফিলেও আলেমগণ নারীকে ঘরে রাখার জন্য বক্তব্য দিয়েছেন। যদি নারীদের ঘর থেকে বের হতে হয়, তাহলে সারা শরীর ঢেকে বের হতে হবে। না হলে রাস্তায় নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণের মতো ঘটনার শিকার হতে হবে। কিন্তু আলেমগণ যদি ওয়াজ মাহফিলে বলতেন, হে পুরুষগণ, তোমরা নারীদের রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করো না। যদি মুমিনদের মধ্যে দুষ্টু লোক এই অপকর্ম করে, রাস্তায় নারীদের উত্যক্ত করে, সেসব পুরুষদের কঠিন শাস্তি দাও!

আরেকটি ঘটনার কথা বলা যাক। ২০২২ সালের ২০ মে ঢাকার কাছে নরসিংদী রেলস্টেশনে এক তরুণী জিন্স ও টপস পরিধান করে যাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন তরুণ ও স্থানীয় মোল্লারা মিলে তাকে মারধর করে। এর কারণ ছিল ওই তরুণীর পোশাক। ইসলাম ধর্মে এ ধরনের পোশাক পরিধান করার নিয়ম নেই। আমার প্রশ্ন হল, তাহলে এই ধরনের পোশাক পরলে হেনস্থা করার কথা বলে হয়েছে, তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার কথা বলা আছে কোথাও? ওয়াজ মাহফিলে আলেমরা যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছেন, তাতে নারীদের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন বাড়ছে।

সত্যি কথা বলতে বোরখা মেয়েদের যতটা না অপমান করে, তার চেয়ে বেশি করে পুরুষদের, আলেমদের। বোরখার প্রতিবাদ আলেমদেরই করা উচিত। অবাক হই আলেম সমাজ কী করে তাদের নিজেদের ধর্ষক পরিচয়টিকে টিকিয়ে রাখতে চায় মেয়েদের বোরখা পরার বিধানটি জারি রেখে! নিজেদের আত্মসম্মানবোধ বলে কিছুই কি নেই তাদের? তারা কেন এখনও বলছে না, ‘আমরা মেয়ে দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়বো না, আমরা আমাদের যৌন ইচ্ছেকে সংযত করতে জানি, আমরা বর্বর নই, আমরা অসভ্য অসংযত ধর্ষক নই। আমরা শিক্ষিত, সভ্য। মেয়েরাও আমাদের মতো মানুষ। মেয়েদেরও তো যৌন ইচ্ছা আছে, সে কারণে আমাদের তো বোরখা পরতে হয় না। যদি মেয়েরা তাদের যৌন ইচ্ছাকে সংযত করতে পারে, আমরা পারব না কেন? আমরা জানি মেয়েদের সম্মান করতে। আমাদের দোহাই দিয়ে মেয়েদের বোরখার কারাগারে ঢুকিয়ে অত্যাচার করা আর চলবে না’।

পরিশেষে বলতে পারি, পশ্চিমা বিশ্বের নারীরা তাদের স্বাধীনমতো পোশাক পরে পুরুষের সাথে একত্রে কাজ করছেন। তারা তো নিজেদের সংযম রক্ষা করতে পারছেন, তাহলে আপনারা মুসলিম হয়ে কেন নিজেদের যৌন লালসা সংযত রাখতে পারেন না?

লেখকঃ মোছা শাকিলা শারমিন
সাংবাদিক ও ব্লগার
shakilapata11@gmail.com