হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ: বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের শাস্তি কি বাতিল হবে?
বাংলাদেশ কিন্তু কেবলই সাইফুল আজমের দেশ
ইমরান চৌধুরী
ফেসবুকের একেবারে শুরুর দিককার কথা। তখনো ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে সরকারী চাকুরীজীবীদের তেমন কোন বিধিনিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো না। সেই সময় সোহাইল নামে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একজন তরুণ ফাইটার পাইলটের সাথে আমার চ্যাটিং হতো। বয়সে আমার সমানই হবে সম্ভবত। তার পিতামহী বাঙ্গালী। সেই সূত্রে বাংলাদেশের প্রতি তার একটা বাড়তি আগ্রহ। সে বলতো, দেখো আমার চেহারা হুবহু আমার দাদীর মতো।
একদিন কথাপ্রসঙ্গে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া কৃতি মানুষদের কথা ওঠায় আমি প্রখ্যাত স্থপতি ফজলুর রহমান খান, পদার্থবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী, পদার্থবিজ্ঞানী ও আমেরিকার বিখ্যাত এফ সিক্সটিন জঙ্গিবিমানের ইঞ্জিনের আবিষ্কারক আবদুস সাত্তার খান প্রমুখের কথা বলছিলাম। বলছিলাম, বাংলাদেশ এঁদের দেশ।
ফ্লাইং অফিসার সোহাইল সেসবে না গিয়ে আমাকে বললো, “তুমি হয়তো জানোনা, তবে পৃথিবীর বহু এয়ারফোর্স পাইলটের কাছে বাংলাদেশ কিন্তু কেবলই সাইফুল আজমের দেশ! আর আমরা ওনাকে নিয়ে বাড়তি গর্ব করি, কারণ তিনি পাকিস্তান এয়ারফোর্সে সার্ভ করেছেন। তিনি যেকোন অ্যাস্পায়ারিং ফাইটার পাইলটের কাছে একজন লিভিং গড।”
বেশ কয়েক মাস আগে শ্রদ্ধেয় কাউবয় জেনারেলের সাথে জেনারেল ভো নগুয়েন গিয়াপের প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম। জেনারেল গিয়াপ আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জেনারেল হিসেবে বরিত। ভো নগুয়েন গিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েতনাম মহাকাব্যিক ইতিহাস সৃষ্টি করে ফরাসী, মার্কিন এবং চীনা সামরিক প্রতাপকে পরাস্ত করেছিলো। অথচ জেনারেল গিয়াপের কোন প্রাতিষ্ঠানিক সামরিক শিক্ষা ছিলোনা। শ্রদ্ধেয় কাউবয় জেনারেল আমায় বলছিলেন, তারপরও একজন সেনা অফিসার জেনারেল হবার স্বপ্ন নিয়ে যখন স্টাফ কলেজে প্রবেশ করেন, তখন তার সামনে আদর্শ হিসেবে যারা ঘোরাফেরা করেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে থাকেন জেনারেল ভো নগুয়েন গিয়াপ।
স্যারের কাছে যখন এসব শুনছিলাম, তখন আমার মনে পড়ছিলো পাবনায় জন্মগ্রহণ করা লিভিং ঈগলের কথা।
বস্তুত, তাবৎ সামরিক নৈপুণ্যের মধ্যে আকাশযুদ্ধের নৈপুণ্যের আলাদা মর্যাদা আছে। কারণ এহেন নৈপুণ্য সচরাচর পরিলক্ষিত তো হয়ই না, চারটা বিমানবাহিনীর হয়ে কাজ করে ভারত ও ইসরাইলের মতো দেশের বিরুদ্ধে কিল রেকর্ড করা অনেকটাই অতিমানবীয় নৈপুণ্য। আপনি কি একে স্রেফ ভাগ্যের খেলা বলে পার পাবেন?
আমাদের দেশের যেমন মানুষ, সেই চেষ্টা তারা করতেও পারে। তবে এক্ষেত্রে কিছু তথ্য জানিয়ে রাখা যায়। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সাইফুল আজম একসাথে দুটি বিমানবাহিনীর হয়ে ইসরাইলী জঙ্গিবিমান ধ্বংস করেন। সেই যু্দ্ধে ৪৫২ আরব ফাইটার প্লেনের বিপরীতে মাত্র ৪৬টি ইসরাইলী বিমান ধ্বংস হয়, যার চারটি হয় সাইফুল আজমের হাতে।
যুদ্ধের শুরুতেই শক্তিশালী মিশরীয় বিমানবাহিনীর বেশিরভাগ জঙ্গিবিমান মাটিতেই ধ্বংস করে ইসরাইলী বিমানবাহিনী। কিন্তু জর্দান ও ইরাকের বিমানবাহিনী এই পরিণতির হাত থেকে রক্ষা পায়, যার কৃতিত্ব দেয়া হয় সাইফুল আজমকে। আরবরা আকাশযুদ্ধে সাইফুল আজমের ম্যানুভার, এবং আশ্চর্য সব স্কিলের কথা আজো সমীহের সাথে স্মরণ করে।
মিশরীয় বিমানবাহিনীকে ছিন্নভিন্ন করে ১৯৬৭ সালের ৫ জুন চারটি ইসরাইলী জঙ্গিবিমান জর্দানের বিমানঘাঁটিগুলোয় হামলা চালায়। এই সময় জর্দান বিমানবাহিনীর একটি হকার হান্টার দিয়ে তুলনামূলক অনেক শক্তিশালী দুটি দাসোঁ মিস্তের ফাইটার বম্বার ভূপাতিত করেন সাইফুল আজম। এই ইসরাইলী বিমানগুলো জর্দানের মাফরাক বিমানঘাঁটি ধ্বংস করতে এসেছিলো। দুই ইসরাইলী বিমানের মধ্যে একটি জর্দানেই ভূপাতিত হয়। এর পাইলটের নাম ছিলো বোলেহ, যাকে যুদ্ধবন্দী করা হয়। আরেকটি মিস্তের বম্বার সাইফুল আজমের গোলা খেয়ে ইসরাইলের সীমান্তের ভেতরে বিধ্বস্ত হয়।
সেই অপারেশন শেষ করেই তিনি ইরাকে উড়ে যান। জর্দান বিমানবাহিনীর হয়ে অসামান্য নৈপুণ্য দেখানোর ৭২ ঘন্টা পর সাইফুল আজম আরেকটি হকার হান্টারে চেপে ইরাকের বিমানঘাঁটিতে হামলা করতে যাওয়া তখনকার যুগের দুটি অত্যাধুনিক দাসোঁ মিরেজ থ্রি আর ভোচুর টু জঙ্গিবিমানকে ধাওয়া করে ডগ ফাইটে ধ্বংস করেন। এই ঘটনায়ও গাইডন দ্রোর ও গোলান নামক দুই ইসরাইলী ফাইটার পাইলট ইরাকের যুদ্ধবন্দী হন।
এছাড়াও ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় সাইফুল আজম পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ১৭ স্কোয়াড্রনের অধীন কর্মরত থাকার সময় তিনি পাকিস্তানী ভূখণ্ডে প্রবেশ করা ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ফল্যান্ড জিন্যাট বিমানকে অপেক্ষাকৃত স্বল্প শক্তির একটি স্যাবর জেট দিয়ে ধাওয়া করে ধ্বংস করেন। এই ঘটনায় বিজয় মায়াদেব নামের একজন ভারতীয় পাইলট যুদ্ধবন্দী হন।
ইরাক, পাকিস্তান, জর্দান থেকে যু্দ্ধকালীন বীরত্ব পদক লাভ করা সাইফুল আজম পৃথিবীতে এমন একজনই। আর কেউ তিনটি আলাদা এয়ারফোর্স থেকে যু্দ্ধে নৈপুণ্য রাখার জন্য পুরস্কৃত হননি।
আর হ্যাঁ, আজ পর্যন্ত সাইফুল আজম ভিন্ন আর কোন ফাইটার পাইলট এককভাবে ইসরাইলের ৪টি জঙ্গিবিমান ধ্বংস করার রেকর্ড গড়তে পারেননি।
জনবার্তা/মতামত/আইএস