হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ: বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের শাস্তি কি বাতিল হবে?
ভারতের লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ : ইসির দুই সিদ্ধান্তে দ্বিতীয় পর্বে ভোটের লড়াই টান টান
একটা গোটা আসনের ভোট স্থগিত এবং তিন দলের চার শীর্ষ নেতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এই সিদ্ধান্তে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার দ্বিতীয় পর্বের ভোট আক্ষরিক অর্থেই টান টান হয়ে উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোট হচ্ছে ১৩ রাজ্য ও ১ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৯৭টি আসনে। এই রাজ্যগুলোর অন্যতম দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু। সেখানে ৩৮টি আসনে ভোট হচ্ছে আজ। ভোট হচ্ছে কেন্দ্রশাসিত পদুচেরিতেও।
তামিলনাড়ু ছাড়া ভোট হবে আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, জম্মু-কাশ্মীর, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, ওডিশা, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন আসনে।
তামিলনাড়ুর মোট লোকসভা আসন ৩৯। দুই দিন আগে, গত মঙ্গলবার এই রাজ্যের ভেলোর আসনে ভোট স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন। ওই আসনে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের পর এই সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচন কমিশন মনে করেছে, সেখানে টাকা ছড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছিল।
কোনো লোকসভা আসনে ভোট এভাবে স্থগিত রাখার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এটা যেমন নজিরবিহীন, তেমনই নজিরবিহীন তিন বড় দলের চারজন শীর্ষ নেতার প্রচারের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা। চারজনের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির দুই নেতা উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ও সুলতানপুরের বিজেপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী। বাকি দুই নেতার একজন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী, অন্যজন উত্তর প্রদেশের রামপুর আসনের সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী আজম খান। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রচারের সময় যে ধরনের কথাবার্তা তাঁরা বলেছেন, তা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছে। চার নেতা-নেত্রীই উত্তর প্রদেশের, যে রাজ্যে শাসক বিজেপির সঙ্গে জোটপন্থীদের লড়াই এবার ক্ষুরধার। নির্বাচন কমিশনের এই দুই সিদ্ধান্তই বুঝিয়ে দিচ্ছে, দ্বিতীয় পর্ব থেকে ভোটের লড়াই কতটা সেয়ানে সেয়ানে হতে চলেছে।
ভেলোরের ভোট যে কারণে স্থগিত রাখা হলো, তামিলনাড়ুতে তা অবশ্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। ২০১৬ সালে ওই রাজ্যে বিধানসভার ভোটের সময় তাঞ্জাভুর ও আরবকুরিচি আসন দুটির ভোট টাকা ছড়িয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগে স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরের বছর ওই রাজ্যের রামকৃষ্ণ নগর আসনের ভোটও স্থগিত রাখা হয়। এবার ভেলোরের ডিএমকে নেতা পুনজোলাই শ্রীনিবাসনের আত্মীয়দের ঘরবাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সাড়ে ১১ কোটি রুপি জব্দ করে আয়কর বিভাগ। অভিযোগ, ‘ভোট কিনতে’ ওই টাকা জড়ো করা হয়েছিল। ডিএমকের আরেক সাংসদ নেত্রী কানিমোঝির বাড়িতেও আয়কর বিভাগ মঙ্গলবার তল্লাশি চালায়। যদিও তেমন কিছু নাকি পাওয়া যায়নি। তামিলনাড়ুতে এবার জয়ের সম্ভাবনা বেশি ডিএমকে-কংগ্রেস জোটের। এই রাজ্য থেকে এআইএডিএমকে ও বিজেপির তেমন আশা নেই।
দ্বিতীয় পর্বে বিজেপির নজর কর্ণাটকের ১৪ আসন, মহারাষ্ট্রের ১০ টি; আসাম, ওডিশা ও বিহারের ৫টি করে এবং উত্তর প্রদেশের ৮টি আসনের ওপর। কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে গতবার বিজেপির ফল ছিল খুব ভালো। এবার কর্ণাটকের বড় চ্যালেঞ্জ কংগ্রেস ও ধর্মনিরপেক্ষ জনতা দলের জোট। মহারাষ্ট্রের ৪৮ আসনের মধ্যে বিজেপি ও শিবসেনা জোট গতবার পেয়েছিল ৪১ টি। সেই সংখ্যা এবারও ধরে রাখা বিজেপি-সেনা জোটের লক্ষ্য। ওডিশায় বিজেপি এবার তেড়েফুঁড়ে নেমেছে। বিজু জনতা দলের কাছে এবারের ভোট কঠিন পরীক্ষা। যেমন পরীক্ষা বিহারে কংগ্রেস-আরজেডি জোটের। উত্তর ভারতে বিজেপির সম্ভাব্য ক্ষতি ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ উত্তর পূর্বাঞ্চল কতটা পোষাতে পারবে, তার ওপর নির্ভর করবে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি না।
প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও উত্তর প্রদেশে ভোট হচ্ছে ৮টি আসনে। এই আসনগুলোর প্রতিটিই গতবার বিজেপি দখল করেছিল। এবার সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোকদলের জোট বিজেপির প্রধান অন্তরায়। আজ ভোট হচ্ছে মথুরায়। সেখানকার বিজেপি প্রার্থী হেমা মালিনী। আগেরবারের ভোটে এখানে তিনি জিতেছিলেন। পাশের কেন্দ্র ফতেপুর সিক্রিতে বিজেপিকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে দাঁড় করিয়েছেন মুম্বাইয়ের আরেক অভিনেতা রাজ বব্বর। ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে আগ্রায় সমাজবাদী টিকিটে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন রাজ বব্বর। এরপর দলত্যাগ করে কংগ্রেসে। এখন তিনি উত্তর প্রদেশ রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি। এবার তিনি এই আসনে জয়ের অন্যতম প্রধান দাবিদার।
আজকের ভোটে তামিলনাড়ু থেকে নির্ধারিত হবে সাবেক মন্ত্রী ডিএমকের কানিমোঝি, কংগ্রেসের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের ছেলে কার্তি চিদাম্বরম এবং ডিএমকের সাবেক মন্ত্রী দয়ানিধি মারনের ভাগ্য। বিহারের নজর কাটিহার আসনের প্রার্থী এনসিপি ছেড়ে কংগ্রেসে আসা তারিক আনোয়ারের ওপর। আসামের শিলচরের ভোটে ঠিক হবে সাবেক কংগ্রেস নেতা সন্তোষ মোহন দেবের কন্যা সাংসদ সুস্মিতার ভাগ্য। জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের ভোট ঠিক করবে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা আরও একবার জিতে সাংসদ হবেন কি না।