সুপ্রিমকোর্টে বিচারকের নৈতিক চরিত্র ও ষ্মরণীয় ষ্মৃতি

ওলিউল্লাহ নোমান, ছবি - ফেসবুক থেকে

ওলিউল্লাহ নোমান |

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয় দফায় হাইকোর্টে অস্থায়ী বিচারক নিয়োগ দেয়া হয় কয়েকজনকে। নিয়োগের আগেই প্রস্তাবিত অস্থায়ী বিচারক নিয়োগের তালিকাটি পেয়ে গেছিলাম। দেখা গেল, এর মধ্যে চলমান একটি খুনের মামলার প্রধান আসামীর নাম রয়েছে। আরো রয়েছেন, সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরে সরাসরি জড়িত একজনের নাম। ২০১০ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ তখন। খুনের মামলাটির বিবরণ সহ সবই লেখলাম। পত্রিকায় ছাপা হল সিঙ্গেল কলামে। তারপরও এ নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা। পরবর্তীতে অবশ্য ভাংচুরকারীর ছবিসহ একটি ফলোআপ নিউজও লিখেছিলাম। (সে ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে)

লেখকের সংযুক্ত রিপোর্টের ছবি

তখন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম। শত আকামের মধ্যে তিনি একটি ভাল কাজ করেছিলেন শেষ বেলায়। সেটা হচ্ছে, খুনের মামলার আসামী ও সুপ্রিমকোর্টে সন্ত্রাসের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে শপথ পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। তাদের দুইজনকে বাদ দিয়ে বাকীদের শপথ দিলেন নিয়োপ্রাপ্ত অন্যান্যদের। এরপরও ৬ মাস চাকুরিতে ছিলেন ফজলুল করিম। এতে এই ৬ মাস তাদের আর শপথ হয়নি। ফজলুল করিম অবসরে ২পন ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর। সেদিনই খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হন। খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই এ দুইজনকে বিচারক হিসাবে শপথ পাঠ করান এবং বেঞ্চ বরাদ্দ করেন। অর্থাৎ যে দুইজনকে ফজলুল করিম শপথ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন, খায়রুল হক তাদের শপথ দিলেন। ওই নিয়োগ প্যানেলের আরেকজন সম্পর্কে তখন সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন ভবনে অনেক কানাঘুষা। নাম মোয়াজ্জেম হোসেন। খোজ নেয়া শুরু করলাম। তাঁর বিষয়ে যা জানলাম এতে গা শিউরে উঠে। কিন্তু বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে তখন অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ইনফরমেশন তখন পুরো সংগ্রহ করে উঠতে পারিনি। ততদিনে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক গ্রেফতার হন। ২০১০ সালের ১জুন পত্রিকা বন্ধ করে দেয় সরকার। এনিয়ে শুরু হয় নতুন দৌড়ঝাপ। খোজ নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছিলাম. মোয়াজ্জেম হোসেন যশোরে ওকালতি শুরু করেছিলেন। তখন যৌবনকাল। বাড়িতে এক সৎবোন রয়েছে। নাম কোহিনূর। সৎ বোনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাঁর। বিষয়টি তখনো প্রকাশ হয়নি। বাড়ির লোকদের কাছে প্রকাশ হয় বিয়ের দিন। মোয়াজ্জেম হোসেন বিয়ে করেছিলেন একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। কিন্তু বিয়ের দিনই মোয়াজ্জেম হোসেনের ঘরের সামনে অবস্থান নেয় কোহিনূর। এতে বাসর রাতও পার হয়নি। প্রথম রাতেই বিয়ে ভেঙ্গে যায়। নতুন স্ত্রী কোহিনূরের দৃশ্য দেখে আর সংসার করতে রাজি হননি। অনেক দিন পার হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। ওই বিয়ের কিছুদিন পর দ্বিতীয় স্ত্রীও ঠের পান, সৎ বোনের সাথে স্বামীর সম্পর্ক। দ্বিতীয় স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তবে দ্বিতীয় স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় এরশাদ আমলে তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল। যদিও সেই ডকুমেন্টস যোগার করা আর সম্ভব হয়নি। যশোরের একজন প্রবীন আইনজীবী রয়েছেন সুপ্রিমকোর্টে। তাঁর প্রথম বিয়ের সাথে অনেকটা জড়িত ছিলেন তিনি। ওই প্রবীন আইনজীবী জানান, দ্বিতীয় স্ত্রী চলে যাওয়ার পর যশোর আইনজীবী সমিতিতে তাঁকে একঘরে করা হয়। অর্থাৎ কেউ মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে আর সম্পর্ক রাখে না। এতে তিনি এরশাদ আমলে চলে আসেন ঢাকায়। শুরু করেন হাইকোর্টে ওকালতি। এবার বিয়ে করেন, সরকারি কলেজ শিক্ষিকাকে। বাংলার শিক্ষক। বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জ। ওই স্ত্রীও একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। এ সংসারে দু’টি কণ্যা সন্তানও জন্ম হয় তাদের। দুই কণ্যা সন্তানেরই শিশু বয়স। ততদিনে সৎবোন গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে এসেছে। এতে সৎবোনের সাথে সম্পর্ক ঠের পেয়ে যান কলেজ শিক্ষিকা স্ত্রী। আমি যখন খোজ খবর নেই বলা হয়েছিল ওই স্ত্রী ঢাকার ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা। চিন্তা করলাম তাঁর সাথে কিভাবে কথা বলা যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম আমার অফিসের একজন মেয়ে সহকর্মীকে দিয়ে কথা বলাব। মহিলা সহকর্মীকে পাঠাই ইডেন কলেজে। আমার এ সহকর্মীও এক সময় ইডেন কলেজের ছাত্রী ছিলেন। তাই অনুরোধ কলাম ওই শিক্ষকের একটা সাক্ষাৎকার নিয়ে দিতে। বললাম, আগে তাঁর সাথে কথা বলে আসেন। ওনার স্বামী হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি আছেন কি না। তারপর বিস্তারিত বলব। প্রয়োজনে আমি সঙ্গে যাব। আমার সহকর্মী গিয়ে জানতে পারেন, ততদিনে তিনি বদলী হয়ে ঢাকার কবি নজরুল কলেজে চলে গেছেন। ইডেন কলেজে আর নাই। তবে ইডেন কলেজে অন্য শিক্ষকরা জানতে চেয়েছিলেন তাঁকে কেন খোজা হচ্ছে। তখন আমার সহকর্মী বলেন, ম্যাডামের স্বামী হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হয়েছেন। তাই এ বিষয়ে কথা বলতে আসা। আমার সহকর্মীর ভাষায়, এটা শোনার পর অন্য শিক্ষকরা ধিক্কার জানাতে শুরু করেন। তারা বলেন, ছি: এরকম লোক হাইকোর্টের বিচারপতি! এর মানে অন্য শিক্ষকরা জানতেন সহকর্মীর জীবনের কষ্ট গুলো। ওই কলেজ শিক্ষিকা স্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আইন ও শালিস কেন্দ্রে নালিশ করেছিলেন। এক পর্যায়ে এ সংসারও ভেঙ্গে যায়। একটা সূত্র জানিয়েছিল, সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। দুই শিশু কণ্যার জন্য মাসে কত টাকা দিতে হবে সেটারও একটি ফয়সালা করে দিয়েছিলেন তিনি।
মোয়াজ্জেম হোসেনের ঘনিষ্ট একজন জানিয়েছিলেন, টাকা পাঠিয়ে ডকুমেন্টস রাখতেন। কোহিনূর সংক্রান্ত বিষয়টি মোয়াজ্জেম হোসেনের ঘনিষ্ট এ ব্যক্তিটিও জানেন। যতটুকু জানা গিয়েছিল, মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রেমিকা সৎবোন, ঢাকা এসেও হানা দিতেন। এক পর্যায়ে চুড়ান্তভাবে ওই সৎবোন ঢাকায় চলে আসেন। এতেই তৃতীয় সংসার টিকে নি। কলেজ শিক্ষিকা স্ত্রী এ অবস্থা দেখে নিজেই সরে পড়েন।
এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ নিয়োগকৃত বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের নৈতিক চরিত্র।

লেখকঃ সাংবাদিক,কলামিস্ট (যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত)

নোটঃ এ বিভাগে প্রকাশিত যেকোন লেখার দায় লেখকের নিজের, জনবার্তা কোন লেখার জন্য দায়বদ্ধ নয়।