৩৮ ওয়াকিটকিতে ইরফানের নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিম তার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। এর জন্য তিনি ব্যবহার করতে আধুনিক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি। এর আওতায় ছিল ৩৮টি ওয়াকিটকি। আর এর কন্ট্রোল রুম ছিল আলিশান ‘চাঁন সরদার দাদা বাড়ী’তে।

জানা যায়, ৩৮টি ওয়াকিটকি নিয়ন্ত্রণ করা হতো ওই কন্ট্রোল রুম থেকে। এর ৩৭টি ওয়াকিটকি ছিল তার বিশ্বস্ত কর্মী ও ক্যাডারদের হাতে। নিজের নানা কর্মকাণ্ডের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করে ওয়াকিটকির গোপন নেটওয়ার্কে যোগাযোগ রাখতেন ইরফান।

সোমবার অভিযানের সময় ওই বাড়ির চারতলা ও পাঁচ তলার কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়াকিটকিগুলো জব্দ করে র‌্যাব। এ ছাড়া সেখান থেকে ৫টি ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভারও (ভিপিএস) জব্দ করা হয়।

iran selim own netwark 38 walkie talkie
৩৮ ওয়াকিটকিতে ইরফানের নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্ক

র‌্যাব বলেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান জানিয়েছেন, এসব ওয়াকিটকিতে তিনি নিজের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেন। এই ওয়াকিটকির নেটওয়ার্ক পাওয়া যেত তার বাসার আশপাশের ৫ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইরফান সেলিম যখন বাসা থেকে বের হতেন কিংবা বাসায় ঢুকতেন, তখন পুরো রাস্তা বন্ধ করে দিতেন তার অনুসারীরা। এ সময় তাদের হাতে থাকতো ওয়াকিটকি। দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, তারা সাধারণ মানুষ, নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। অর্থাৎ নিজস্ব স্টাইলে ‘ভিআইপি’ প্রোটোকল নিয়ে চলতেন তিনি।

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, তাদের কথোপকথন যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে চলে না যায়, সেজন্যই এই এসব ওয়াকিটকির মাধ্যমে নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন ইরফান সেলিম। সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভিআইপি নিরাপত্তা যোগাযোগের ক্ষেত্রে এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া তিনি যে ব্যক্তিগত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতেন তার জন্য বিটিআরসির কোনো অনুমোদন ছিল না। ফলে পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের দেবীদাস লেনে হাজী সেলিমের বাড়ি ‘চান সরদার দাদা বাড়ীতে’ সোমবার দুপুর থেকে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া অভিযানে ওই বাসা থেকে অস্ত্র, বিদেশি মদ, ইয়াবাসহ বিভিন্ন অবৈধ জিনিসপত্র জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ইরফান সেলিমকে দেড় বছর এবং তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। এর মধ্যে ইরফানকে মাদক মামলায় এক বছর এবং অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ৬ মাসের দণ্ড দেওয়া হয়। আর তার দেহরক্ষীকে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।