করোনা শনাক্ত হচ্ছে, তবে মৃত্যুর পর!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দেওয়া হচ্ছে করোনার চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন অনেকেই। পরে জানা যাচ্ছে, ওমুক মৃত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই মারা যাচ্ছেন অনেকে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে নমুনা দেওয়া হয়নি, পরে মৃতদেহ থেকে নমুনা নিয়ে দেখা যায়, করোনাভাইরাস পজিটিভ! দেশে দিন দিন এমন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে করোনার চিকিৎসা শুরু হয় গত ২ মে। মাত্র তিনদিনের মাথায় সেখানে ভর্তি হন ৩০২ জন রোগী। প্রায় সবার মধ্যেই করোনাভাইরাসের কমবেশি উপসর্গ বিদ্যমান। ধারাবাহিকভাবে তাদের অনেকেরই নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই কিংবা এখনও নমুনা নেওয়া হয়নি, এমন অনেকে মারা যাচ্ছেন। তিন দিনের মাথায় এভাবে মারা গেছেন ৩০ জন।

বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ থেকে কোনো নমুনা নিচ্ছে না। তবে নমুনা নেওয়ার পর রিপোর্ট আসার আগেই মারা গেছেন এমন চারজনের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে। মৃত ব্যক্তির স্বজনসহ অনেকেই বলছেন, বাকি ২৬ জনের মৃতদেহ থেকে যদি নমুনা নেওয়া হতো তাহলে দেখা যেত তাদের অধিকাংশই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

identify after
মারা যাওয়ার পর শনাক্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দীন বলেন, ‘করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগী আসেন, যারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন। মারা যাওয়ার পর অনেকের রিপোর্ট আসার পর দেখা যায় কোভিড-১৯ পজিটিভ।’

নমুনা নেওয়ার আগেই যারা মারা যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে মৃতদেহ পরীক্ষা করা হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মর্গে কোনো জায়গা নেই, তাই এটা করা সম্ভব নয়।’

দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করা দ্বিতীয় চিকিৎসক হলেন বিশিষ্ট হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান। গত রোববার তিনি মারা যান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। মারা যাওয়ার পর ঘোষণা করা হয়, তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন। গত শুক্রবার চাঁদপুর সদর হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়। গতকাল রাতে রিপোর্ট আসার পর জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।

গত মাসের শেষদিকে কুমিল্লার দেবিদ্বারে মারা যান একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আরেকজন মেম্বার। মেম্বারের ক্ষেত্রে তিনদিন পর আসা রিপোর্টে দেখা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে দাফন-কাফনের পর এলাকাবাসী জানতে পারে, তিনি ছিলেন কোভিড-১৯ পজিটিভ।

দেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এমন অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা উদ্বেগের বিষয় এজন্য যে, মৃত্যুর আগে করোনা শনাক্ত না করা গেলে অসতর্কতার দরুণ মৃত ব্যক্তির আশপাশের অনেকের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এমন মৃত্যু আতঙ্ককে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।