হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ: বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের শাস্তি কি বাতিল হবে?
প্রধানমন্ত্রী বরাবর একজন নন-এমপিও শিক্ষকের খোলা চিঠি
জনবার্তা অনলাইনঃ প্রাণঘাতী ভাইরাস কোরোনা মহামারী আকার ধারণ করার কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অচলাবস্থা চলছে। এরই মধ্যে স্কুল- কলেজ, অফিস-আদালত সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা দেশে এক ধরণের স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত বুধবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে শিল্প কারখানার শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সরকারী প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু অন্যান্য মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পেশাজীবি এবং শিক্ষক, চাকরিজীবীদের জন্যে প্রধানমন্ত্রী কোনও রকম ঘোষণাই দেননি। যার ফলে স্বাভাবিক অবস্থাতেই ধুঁকে ধুঁকে সংসার চালানো মানুষগুলো এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এদের মধ্যে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সরকারী কোনো সহযোগিতা ছাড়াই এ নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বৃহত্তর অবদান রাখছে। কিন্তু বর্তমানে লম্বা সময়ের জন্যে স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সংসারে এরই মধ্যে হাঁসফাঁস শুরু হয়েছে। আর তাই টঙ্গীর আল- হেলাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। তাঁর চিঠিটি হুবুহু জনবার্তার পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলোঃ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি আকুল আবেদন-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বিশ্বনন্দিত মানবিক ও দূরদর্শী একজন রাষ্ট্রনায়ক। দেশের সকল শ্রেণিপেশার নাগরিকের আপনি অভিভাবক। তাই আপনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন, বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতে সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম অংশিদার কেজি স্কুল ও ননএমপিওভুক্ত স্কুল কলেজের লাখ লাখ শিক্ষক কর্মচারির কথাও আপনি গুরুত্বের সাথে ভাববেন।
১৭ মার্চ থেকে আগামী ৯ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার বন্ধ ঘোষণা করেছে। ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের বিস্তার ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সরকারের এই সময়োপগী সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারি এবং এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল কলেজের পাশাপাশি দেশের সকল কেজি স্কুল ও ননএমপিওভুক্ত স্কুল কলেজগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছে।
আগামী ৯ এপ্রিলের পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চালু করা সম্ভব হবে কিনা তা বলা যাচ্ছেনা। এ অনিশ্চিত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার যে ক্ষতি হচ্ছে তা হয়তো পরিস্থিতির কারণে সকলকে মেনে নিতে হচ্ছে বা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক কর্মচারিগণকে বর্তমান দূর্যোগপূর্ণ সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকার তাদের বেতন দিবেন। কিন্তু সরকারের সামগ্রিক শিক্ষা উন্নয়নের অন্যতম অংশিদার দেশের কয়েক লাখ কেজি বা প্রাইভেট স্কুল ও কলেজের লাখ লাখ শিক্ষক কর্মচারির জীবন কিভাবে চলবে? উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য সামান্য বেতনে তাঁরা জাতি গঠনে ভুমিকা রাখছে। সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ন্যায় কোন জমানো টাকাও তাঁদের থাকার কথা নয়।
এমতাবস্থায় তাদের কথা কি সরকার বা দেশের নীতি নির্ধারকরা কিছু ভাবছেন? না ভেবে থাকলে এখনই ভাবতে হবে। কারণ দেশের লাখ লাখ কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইভেট স্কুল কলেজকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি স্কুল এবং এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল কলেজের মাধ্যমে দেশের সকল শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন জরিপে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
সুতরাং দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার ও সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ, দেশ ও জাতি গঠনে ভুমিকা পালনকারি কিন্ডারগার্টেন ও ননএমপিওভুক্ত সকল পর্যায়ের স্কুল কলেজের শিক্ষক কর্মচারিদের কথা জরুরি ভিত্তিতে ভাবুন।
তা নাহলে দেশের বিরাট একটি শ্রেণির পরিবারে বর্ণনাতীত মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই, তিনি যেন বিশ্ববাসীকে মহামারি করোনা ভাইরাসসহ সকল আজাব ও গজব থেকে মুক্তি দেন। সেই সাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তাঁর সুযোগ্য মানবিক নতৃত্বের মাধ্যমে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে পারেন সেই তৌফিক কামনা করছি।
কেজি স্কুল ও ননএমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক কর্মচারিদের পক্ষে-
মুহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
বিএসএস (অনার্স), এমএসএস(অর্থনীতি), এমবিএ (এইচআরএম)
প্রধান শিক্ষক
আল-হেলাল স্কুল
টঙ্গী, গাজীপুর।