হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ: বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের শাস্তি কি বাতিল হবে?

বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার প্রচলিত আইনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। রিটে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার বিধান কেন অবৈধ, বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদকঃ  শাকিলা পাতা  এসপি 

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে “বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন” একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও, এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। রিটে এই আইনকে “অসাংবিধানিক, অবৈধ ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনকারী” হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

রিটের মূল যুক্তি:

সম্মতির সম্পর্ক বনাম  প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ: রিটকারীদের যুক্তি, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক যদি শুধুমাত্র “বিয়ের প্রতিশ্রুতি” পালন না করার কারণে অপরাধ ধরা হয়, তবে তা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নারীর সম্মতির অধিকারের পরিপন্থী।

নারীর সিদ্ধান্তহীনতা নয়: আইনটির ব্যবহারে নারীকে “লোভী বা অসচেতন” হিসেবে চিত্রিত করা হয়, যা নারীর স্বাধীন ইচ্ছা ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে।

লিঙ্গ সমতার প্রশ্ন: শুধুমাত্র পুরুষের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করার প্রক্রিয়া সংবিধানের সমতা ও ন্যায়বিচারের নীতির লঙ্ঘন বলে দাবি করা হয়েছে।

আবেদনকারী পক্ষ:
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসান ও মানবাধিকার সংগঠন এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান রিট দায়ের করেছেন।
বিবাদী পক্ষে রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ বিভাগ ও নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

আইনের বর্তমান প্রভাব:
দণ্ডবিধি ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো পুরুষ যদি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে তিনি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দণ্ডিত হতে পারেন।

সমালোচকদের মতে, এই আইন অনেক সময় অপব্যবহার হয়, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতাকে ফৌজদারি অপরাধে রূপান্তরিত করা হয়।

পরবর্তী পদক্ষেপ:
হাইকোর্টের বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালেদী-এর বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। রুল জারি হলে সরকারকে এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে জবাব দিতে হবে।

বিশ্লেষণ:
যদি রিটটি গৃহীত হয়, তবে বাংলাদেশের পারিবারিক ও ফৌজদারি আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। নারীবাদী গোষ্ঠীর একাংশ এটিকে নারীর সুরক্ষা আইনের ক্ষয় হিসেবে দেখতে পারেন, অন্যদিকে মানবাধিকার কর্মীরা একে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জয় বলে বিবেচনা করতে পারেন। এই মামলার রায় দেশের লিঙ্গবিষয়ক আইন ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন হাইকোর্টের হাতে।